বৃহস্পতিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০২:০৯ পূর্বাহ্ন

স্কুলটি যেকোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা

স্কুলটি যেকোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা

রিপোর্ট আজকের বরিশাল:
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠীর সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বিভিন্ন গ্রামের বসতঘর, বাগানবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। বিশেষ করে এই অব্যাহত ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে কৌরিখাড়া ও গণমান গ্রামের মানচিত্র। এমনকি নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে শান্তিহার কুনিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টির ৬২ শতাংশ জমির মধ্য থেকে ৫৬ শতাংশই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ভাঙন কবলিত নদীর পাড় থেকে এ বিদ্যালয় ভবনের দূরত্ব মাত্র ১০ থেকে ১৫ ফুট। গত কয়েকদিনে নদীর পাড়ে (বিদ্যালয় ভবনের পাশে) বড় ধরনের ফাটল দেখা দেয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় বিদ্যালয়ের একমাত্র পাকা ভবনটি নদীতে ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর। প্রাণহানীসহ মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে পড়ালেখা করছে শিক্ষার্থীরা। নদী ভাঙনের তীব্রতা দেখে এ বিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছে অনেক শিক্ষার্থী। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে মাত্র ২৪ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করলে নিয়মিত উপস্থিত হচ্ছে ১৩-১৫ জন। আর পাঠদানে নিয়োজিত আছেন চারজন শিক্ষক। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাসুম জাগো নিউজকে জানান, বিদ্যালয়টি ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে একটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। এক সময় বিদ্যালয়টিতে শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করলেও নদী ভাঙনের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশিরভাগ অন্য জায়গায় চলে গেছেন। সেই কারণে বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী আছে মাত্র ২৪ জন। ওই বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকার প্রায় ৮২ ভাগ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংকট দেখা দিয়েছে। ক’বছর পূর্বে দক্ষিণ ও উত্তর কৌড়িখাড়া গ্রামে সামান্য এলাকা ভাঙনরোধে ব্লক ও জিও টেক্স ব্যাগে বালু ভর্তি করে ফেলানো হয়। ফলে ওই এলাকায় ভাঙন থামলেও সন্ধ্যা নদীর দক্ষিণ দিকে ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বছর দু’য়ের মধ্যে দক্ষিণ কৌরিখাড়া ও গণমান গ্রামে অনন্ত ৪০টি বসত ভিটে, কৌরিখাড়া লঞ্চ ঘাট এলাকার ১০টি দোকানসহ প্রায় ৫০ একর বাগানবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দফায় দফায় এ ভাঙনের ফলে দক্ষিণ কৌরিখাড়া ও গণমান এলাকার সন্ধ্যা পাড়ের মানুষ আতঙ্কের মধ্য দিন কাটাচ্ছেন। সন্ধ্যা নদীর তীরে বসবাসকারী গণমান গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, নদী ভাঙনের কারণে বসত ঘর স্থানান্তর করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। জায়গা জমি না থাকায় শেষ আশ্রয়স্থল বসতভিটায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছি। কৌরিখাড়া ও গণমান এলাকার নদীপাড়ে বসবাসকারীরা জানান, সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙনে তারা আতঙ্কগ্রস্থ। প্রায়ই তাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। সন্ধ্যার করাল গ্রাসে দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে দক্ষিণ কৌরিখাড়া ও গণমান গ্রাম। ইতোমধ্যে নদী ভাঙনে কৌরিখাড়া ও গণমান গ্রাম দুটির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ সন্ধ্যার অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে স্বরূপকাঠীর মানচিত্র থেকে অচিরেই হারিয়ে যাবে ওই গ্রামগুলো এবং পাল্টে যাবে মানচিত্র। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশির দশকের শেষ দিকে শুরু হয়ে এখন অব্যাহত রয়েছে এ নদীর ভাঙন। অব্যাহত এ ভাঙনের কারণে উপজেলার গণমান, ছারছীনা, দক্ষিণ কৌরিখাড়া, উত্তর কৌরিখাড়া, শান্তিহার, কুনিয়ারী, ব্যাসকাঠি, জলাবাড়ী, পুর্ব সোহাগদল সেহাংগল এলাকার হাজার হাজার একর ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদের অনেক বসতভিটে সর্বনাশা সন্ধ্যার গর্ভে হারিয়ে গেছে। নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে ছিন্নমূলে পরিণত হয়েছে ওই সব এলাকার অনেক পরিবার। নদী ভাঙনের ফলে বার বার স্থান পরিবর্তন করে সর্বশান্ত হয়ে গেছে তারা। ভিটেমাটি হারিয়ে ওই পরিবারগুলো এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। কেউ রাস্তার ওপর, কেউবা অন্যের বাগানে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। স্বরূপকাঠী-পিরোজপুর সড়কের কামারকাঠি নামক স্থানে নদী ভাঙনের ফলে চরম ঝুঁকির মধ্যে চলাচল করছে যানবাহন। এ দিকে সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের হুমকির সম্মুখীন কৌরিখাড়া বিসিক শিল্প নগরী, ইন্দুরহাট মিয়ারহাট বন্দর, কৌরিখাড়া ডাকঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। গত শুক্রবার স্বরূপকাঠীর সন্ধ্যা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) মো. জাহিদ ফারুক। এসময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নদী ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করা হচ্ছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো চিন্হিত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্বরূপকাঠী উপজেলার সন্ধ্যা নদীর ভাঙনরোধে পরিদর্শনে আসা হয়েছে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2012
Design By MrHostBD