শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:২৩ অপরাহ্ন
রিপোর্ট আজকের বরিশাল:
স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে খুন হয়েছেন সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর এলাকার বাসিন্দা ও দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজ (৪০)। স্বামীকে হত্যার দায় স্বীকার করে রবিবার দুপুরে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা (৩০)। বরিবার দুপুরে মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) রুনা লায়লা, সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ রাসেল, কোতয়ালি মডেল থানার চৌকস ওসি নুরুল ইসলাম পিপিএম ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বশির আহমেদ। উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতে রিয়াজের স্ত্রী লিজা ছাড়া আরও দুইজন জড়িত ছিলেন। তাদের একজনের নাম মাসুম ও অন্যজন হালিম। মাসুম নিহত রেজাউল করিমের সহকারী ও লিজার পরকীয়া প্রেমিক। তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে লিজা ও নিহতের ভাইকে পুলিশ আটক করেন। পরে লিজার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিত্বে নিহতের ভাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। হত্যাকান্ডে জড়িত মাসুমসহ বাকি দুইজনকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে। ঘটনার বিবরণে উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, চার বছর আগে বন্দর থানাধীন চরকাউয়া এলাকার দেলোয়ার খানের কন্যা আমিনা আক্তার লিজার সাথে চরমোনাই ইউনিয়নের রাজধর গ্রামের ছাত্তার হাওলাদারের পুত্র দলিল লেখক রেজাউল করিমের বিয়ে হয়। এর আগে লিজার দুইবার ও নিহত রিয়াজের একবার বিয়ে হয়েছিলো। আগের বিয়ে বিচ্ছেদের পর তারা নতুন সম্পর্কে জড়ান। লিজার পূর্বের স্বামী ছিলেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধ। তার কাছ থেকে জমি ও বাড়ি কৌশলে লিখে নিয়ে বৃদ্ধকে তালাক দেন আমিনা আক্তার লিজা। আর রেজাউল করিম আগের স্ত্রীর সাথে ১০ বছর সংসার করার পর তাকে তালাক দেন। নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রেফতারকৃত লিজার বরাত দিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, যেহেতু রেজাউলের আগের সংসারে কোনো সন্তান হয়নি এবং লিজারও কোনো সন্তান নেই। এনিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিলো। এ ছাড়া পলাশপুরের ১৬ দশমিক ৫০ শতক জমি লিজা তার নামে লিখে দিতে বললেও তাতে রাজি ছিলেন না স্বামী রেজাউল। এরইমধ্যে রিয়াজের সহকারী মাসুমের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পরেন লিজা। মাসুম তাকে আশ্বস্ত করেন তিনি রেজাউলের চেয়েও লিজাকে বেশি সুখে রাখবেন। এসব চিন্তা করে লিজা তার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সেমতে লিজা মাসুমের সাহায্যে দুধের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রেজাউলকে খাইয়ে অচেতন করে রাখেন। পরবর্তীতে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে তিনজনে মিলে ধারালো ক্ষুর ও দা দিয়ে কুপিয়ে রেজাউলকে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে হত্যাকারীরা খাটের নিচে সিঁদ কেটে রাখে। পরে মাসুম ও তার সহযোগি পালিয়ে গেলে লিজা পোষাক পাল্টে ঘরের বাহিরে এসে ডাকচিৎকার করতে থাকেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। লিজাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও হত্যার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।