শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:৪৩ অপরাহ্ন
রিপোর্ট আজকের বরিশাল:
বরিশাল নগরীর কলেজ রো এলাকার বাসার সামনে থেকে দুপুরে উধাও হয়ে যাওয়ার সাড়ে তিনমাস পরও নিখোঁজ শিশুটিকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। যদিও এটি একটি অপহরণ এবং অপহরণের পর মুক্তিপন দাবী করা চার যুবকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর পর তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।কিন্তু হদিস মেলেনি শিশুটির। শিশুটি কোথায় আছে, বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে এই বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারছে না। শুধু তদন্তের নামে পুলিশ সময় অতিবাহিত করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের এমন কালক্ষেপন নিয়ে শিশুটির পরিবারে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছেই। অপহৃত ওই শিশুটির নাম দীপা রানী সমাদ্দার ওরফে পুটি। বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, শিশু দীপার সন্ধান পেতে পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে চেষ্টা করছে। কিন্তু আসামিরা মুক্তিপণ চাওয়ার কথা স্বীকার করলেও অপহরণের বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছে না। যে কারণে কোন ক্লু ছাড়াই অপহৃত শিশুটিকে খুঁজে বের করতে সময় লাগছে। তবে অহৃতার স্বজনরা দাবী করেছে পুলিশ ইচ্ছা করে শিশুটিকে উদ্ধারে আন্তরিক নন।পুটির বাবা বিনয় সমাদ্দার বলেন, পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা মুক্তিপণের কথা স্বীকার করেছে। বরং পুলিশকে টাকা দিতে না পারায় পুটিকে উদ্ধারে তৎপরতা নেই বলেও অভিযোগ তার। তিনি বলেন, পুটি অপহরণ হওয়ার আগের দিন তাঁরা বেসরকারি সংস্থা ‘আশা’ থেকে ৩৬ হাজার টাকা ঋণ তুলেছিলেন। এটা প্রতিবেশী রাসেল খান জানতো। আর ওই টাকার লোভেই দীপাকে তারা অপহরণ করেছেন। পুটির মা চায়না সমাদ্দার বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনদিন থানাতে যাই, পুলিশ শুধু বলে আমরা দেখতেছি। কই তাঁরা কিছুই তো দেখছেন না। দেখলে এতোদিনেও আমার মেয়েকে খুঁজে পেতাম না। তদন্তে গাফেলতির বিষয়টি অস্বীকার করে তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) সাইদুল হক বলেন বলেন, মামলাটি আমরা চাঞ্চল্যকর হিসেবে গ্রহণ করেছি। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখন তদন্ত কাজ তদারকি করছেন। এতে কারও গাফলতি নেই। বরং নতুন বেশকিছু সূত্র ধরে তদন্ত চলছে। এক কথায় বলা চলে শিশুটিকে উদ্ধারে আমরা এখনও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সাইদুল বলেন, অপহরণের পর প্রতিবেশী রাসেল খান ও তার ভাই সজীব খান এবং ফারুক ও আসাদুল হকসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জনই বরিশাল মহানগর বিচারকি হাকিম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু তারা শিশুটির বাবার কাছে টাকা দাবি করার কথা স্বীকার করলেও শিশুটিকে অপহরণের কথা অস্বীকার করেছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল মহানগর কমিটির সভাপতি প্রফেসর গাজী জাহিদ হোসেন বলেছেন, একটি শিশু দিনের বেলা নিখোঁজ হলো অথচ তিনমাসেও তার কোনো হদিস পাওয়া গেল না। এটা আসলেই চিন্তার বিষয়। শিশুটিকে উদ্ধারে পুলিশের আন্তরিকতা অভাব রয়েছে। গত ৬ জানুয়ারি রোববার সকাল ১০টায় শিশু পুটি বাসার সামনে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ হওয়ার পর অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মুঠোফোনে পুটির বাবার কাছে একাধিকবার কল ও ম্যাসেজ দিয়ে ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বাবা রেস্তোরাঁ কর্মচারী বিনয় সমাদ্দার বাদী হয়ে ৭ জানুয়ারি রাতে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন। মামলাটিকে আসামিরা অজ্ঞাত থাকলেও পুলিশ তাদের প্রতিবেশী রাসেল খান ও তার ভাই সজীব খান, ফারুক এবং আসাদুল হকসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। আটককৃতরা বরিশাল মহানগর বিচারক হাকিম পলি আফরোজের আদালতে জবানবন্দি দেন। সেখানে তাঁরা পুটির পিতার কাছে মুঠোফোনে ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে দীপাকে অপহরণে কথা অস্বীকার করেন। তাদের দাবি, দীপা নিখোঁজ হওয়ার পর লোভে পড়ে তাঁরা মুঠোফোনে অপহরণের কথা বলে ওই অর্থ চেয়েছিল।