সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন
রিপোর্ট :
ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরার প্রতি সরকারি নিষেধাজ্ঞা বা নদীতে মাছ কম ধরা পড়লে অভাবে ও অর্ধাহারে দিন কাটাতো জেলেরা। অনেকে মহাজন ও এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধের ভয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতো। বর্তমানে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থানে স্বাবলম্বী হচ্ছে তারা। ফলে নদীতে অভিযান ও মাছ কম পড়লেও ধার করা টাকা পরিশোধের ভয়ে পালাতে হচ্ছে না তাদের।
জেলেদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ জেলে। তবে সরকারি নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজার ২৬০ জন। নিবন্ধন থাকলেও সবার ভাগ্যে জোটে না সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত চাল। সরকারি বরাদ্দকৃত চাল পাচ্ছে মাত্র ৫১ হজার ১শ’ ৫০ জন। ফলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা বা নদীতে মাছ কম পড়লে বিভিন্ন এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চলতে হয়। নিষেধাজ্ঞা ও নদীতে মাছের পরিমাণ কম হলে ঋণের টাকা পরিশোধের ভয়ে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে বেড়ায়। আবার ভরা মৌসুমে অভাব ও ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে মাছ শিকারে নামে। তবুও অভাব দূর হয় না। এসব গরিব জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ প্রকল্প।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মাঝে বিনামূল্যে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, শাক-সবজির বীজ ও হস্তশিল্পের সরঞ্জাম দিয়ে আসছে। ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ওইসব জেলে এখন আর অভাবে পরে না। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে।
ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের নাছির মাঝি এলাকার জেলে মো. ফিরোজ বলেন, ‘আমি একসময় অনেক কষ্টে জীবন কাটাতাম। দেনার ভয়ে পালিয়ে থাকতাম। এখন আর অভাবে থাকি না। অনেক সুখে আছি।’একই এলাকার শাহানাজ বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী জেলে। আমরা অনেক কষ্টে দিন কাটাতাম। আমি ইকোফিশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হস্তশিল্পের কাজ করছি। এ কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছি। এখন আর নদীর ওপর নির্ভর করতে হয় না।’ভেদুরিয়া ইউনিয়নের মধ্য ভেদুরিয়া গ্রামের জোসনা বেগম বলেন, ‘নারীদের জন্য মৎস্যজীবী নারী কল্যাণ তহবিল সমিতি গঠন করেছি। ইকোফিশ আমাদের ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে। এখন নিজেরা নিজেদের মধ্যে সমিতির নিয়ম অনুযায়ী ঋণ নেই। এখন আর অন্যের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয় না।’ইকোফিশ প্রকল্পের সহ-সমন্বয়কারী সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘জেলায় আমরা সাড়ে ৭ হাজার জেলে নিয়ে কাজ করছি। তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১১৬ জন জেলেকে মাসিক বেতনে কমিউনিটি ফিশ ঘট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জেলে পরিবারের নারীদের নিয়ে ৩৭টি মৎস্যজীবী নারী কল্যাণ তহবিল গঠন করে প্রতি তহবিলে ২৫ হাজার টাকা করে মূলধন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওই তহবিলে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূলধন রয়েছে।’ওয়ার্ল্ডফিশ সংস্থার রিসার্স অ্যাসোসিয়েট অংকুর মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘দরিদ্র জেলে ও তাদের পরিবারকে স্বাবলম্বী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। উপকরণ বিতরণের পাশাপাশি তদারকি করার জন্য মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এছাড়া জেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন সময় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি।’জেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ইকোফিশ প্রকল্পটি জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে যাচ্ছে। এতে জেলেরা সচেতন হয়েছে। তারা নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে মাছ শিকার করতে যাচ্ছে না।’