রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:২২ অপরাহ্ন
তীব্র গরমে বরিশাল নগরীর মানুষ তীব্র পানিসংকটের মুখোমুখি। কিন্তু এটা অবশ্যই কোনো আকস্মিক প্রাকৃতিক দুরে্যাগকবলিত হওয়ার পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনীয় নয়। যাঁদের যা অনেক আগেই করার কথা ছিল, সেটা তাঁরা কেউ করেননি। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভয়ানকভাবে নিচে নেমে যাওয়া বা ৬০ ফুটের পরিবর্তে ১০০০ ফুট খনন করে পাম্প বসিয়ে পানি পাওয়ার মতো সমস্যার কোনোটিই রাতারাতি তৈরি হয়নি। বরং এসব যে ঘটতে পারে, সেটা বহু আগেই বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দায়িত্বশীলদের চৈতন্যোদয় ঘটেনি। বরিশাল নগরীর দুটি পানি শোধনাগারের পানি সরবরাহের সামর্থ্য ৩ কোটি ২০ লাখ লিটার হলেও বাস্তবে নগরবাসীর প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, তখনো ১ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এটা যন্ত্রের সামর্থ্যের চেয়ে মাত্র অর্ধেকের কিছু বেশি। তাঁরা এই চরম প্রয়োজনের সময় চাইলেও তা বাড়ানোর হিম্মত রাখেন না। কারণ, অব্যাহত বা বর্ধিত পানি সরবরাহের জন্য ন্যূনতম দরকারি অবকাঠামো তৈরিতে তাঁরা গরজ করেননি। তিন কোটি লিটার পানি পেতে কমপক্ষে ১৭টি ওভারহেড ট্যাংকের দরকার থাকলেও চলছে মাত্র ৭টি দিয়ে। এখন দরকার হলো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহির ব্যবস্থা করা। নগরবাসীর কাছে এই কৈফিয়ত হাজির করা যে বর্ধিত ওভারহেড ট্যাংক বা অন্য কোনো বিকল্প বেছে নিতে তাঁরা কেন পদক্ষেপ নেননি, নিয়ে থাকলে কেন তা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পরিহাস হলো, পানিসংকটের কৈফিয়ত হিসেবে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ প্রকারান্তরে ‘আল্লাহর মাল’ তত্ত্বকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে উদ্গ্রীব। কারণ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এটা তুলে ধরতেই প্রগলভ যে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কতটা নিচে নেমেছে। বেশি বেশি গভীর নলকূপ বসিয়ে খুব লাভ নেই। ধান, নদী, খালÍএই তিনে যে বরিশাল। সেখানকার নগরবাসী পানির কষ্টে ভুগবে, এটা নিতান্তই আফসোসের বিষয়। খাওয়ার পানির উৎস হিসেবে নদী, পুকুর বা জলাশয় যে জনজীবনে কার্যকর হতে পারে, সে বিষয়ে নগর এবং সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোকেই উদ্যোগী হতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। তাদের হাতের নাগালে পৌঁছে দিতে হবে দরকারি উপকরণ। এটা স্বস্তিকর যে বরিশালের নতুন নগর প্রশাসন বর্তমানে পানিবিষয়ক একটি জরিপ পরিচালনা করছে, যার লক্ষ্য হলো পানিসংকট নিরসনে বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করা। আমরা আশা করব, এই জরিপের কাজ অনতিবিলম্বে শেষ হবে। নগরবাসীর প্রতিদিনের চাহিদার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ পানি সরবরাহের যে ব্যবস্থা বর্তমানে চলমান আছে, তার খোলনলচে পাল্টে দেওয়া সময়ের দাবি। আগামী ৫০ বছরে বরিশালের নগর সম্ভাব্য কতটা সম্প্রসারিত এবং তার লোকসংখ্যা কী হবে, তা বিবেচনায় নিয়েই উপযুক্ত মেগা প্রকল্প নিতে হবে।