সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৯ পূর্বাহ্ন
রিপোর্ট আজকের বরিশাল:
ইলিশের ভরা মৌসুমে সাগরে ৬৫ দিন সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ করায় উপকূলীয় এলাকা বরগুনার পাথরঘাটার জেলেরা না খেয়ে দিন পার করছেন। অনেকে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে না দিতে পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ইলিশের ভরা মৌসুমে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই মোট ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞার জারি করা হয়। এ নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিপাকে পড়েছেন জেলেসহ বিপণন পেশায় নিয়োজিত উপকূলের পাথরঘাটার প্রায় ৪০ হাজার পরিবার। মাছের ওপর নির্ভর করেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা। অবরোধের মাস না পেরুতে অভাবের বেড়াজালে দিশাহারা জেলেরা। এই নিষেধাজ্ঞা থাকায় উপজেলার জেলে পরিবারগুলোতে ছিল না ঈদের আমেজ। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৪ হাজার ৩৫০ জন। কিন্তু সব মিলিয়ে এ উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার জেলে রয়েছে। মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রতি মাসে প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। তবে নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে ৬৮৩ জেলে এখনও কোনো সহযোগিতার আওতায় আসেননি। এছাড়া অনিবন্ধিত জেলেরাও সহযোগিতার আওতায় নেই। দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) বরগুনার পাথরঘাটায় দেখা যায়, জেলেরা ট্রলার ঘাটে বেঁধে রেখে অলস সময় কাটাচ্ছেন। এ সময় জেলেরা জানান, সাগরে ইলিশ ধরা বন্ধ করায় তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। ঈদের দিনেও ভালো খেতে পারেননি তারা। অধিকাংশ জেলে পরিবারই ধারদেনা করে চলছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সাধারণ জেলেদের আয়ের পথ না থাকায় তারা বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা করেছন সংশ্লিষ্টরা। এ নিষেধাজ্ঞায় ট্রলার মালিকরাও জেলেদের দাদন দিয়ে পড়েছেন অনিশ্চয়তায়। ট্রলার মালিক বেলাল জানান, ট্রলার ও জাল মেরামত এবং জেলেদের আগাম টাকা দিয়ে তারা এখন সাগরে মাছ ধরতে পারছেন না। নিষেধাজ্ঞার কারণে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা এলাকার জেলে আল-আমিন জানান, অনেক দিন মাছ ধরতে না পারায় তাদের একমাত্র আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন, পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে আছেন। এনজিওর ঋণ পরিশোধ করতে না পরলে এলাকা ছেড়ে পালাতে হবে। বাংলাদেশ ফিশিং বোর্ড মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, তারা সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে উপকূলে ফিরেছেন। সাগরে যেতে না পারায় চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। দীর্ঘদিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেরা অন্য পেশায় ঝুঁকছেন এবং বহু জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন। তিনি আরও জানান, ঋণের দায়ে অনেক বোট মালিক দেউলিয়া হয়ে যাবেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধের এই আইন বাস্তবায়নে মৎস্য অধিদফতর, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং স্থানীয় মৎস্য দফতরের উদ্যোগে ব্যাপকভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আইন ভাঙলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে এ সময় জেলেরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের বিশেষ ভিজিএফের মাধ্যমে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরগুনায় ৩৯ হাজার ৮০০ জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।