শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ০৩:২৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বরিশালে জমি দখলকে কেন্দ্র করে হামলা ও লুটপাট আহত অন্তত ৭ জন, থানায় অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ট্রাম্পের শুভেচ্ছাবার্তা কিসের ইঙ্গিত? ভারত কি তবে ব্যর্থ! কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি বলেই বেগম জিয়া ‘একজন আপোষহীন নেত্রী’ — আবু নাসের মো: রহমাতুল্লাহ মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবু সাঈদের ‘ভাস্কর্য’ চায় না পরিবার সংস্কার ও বিচারবিহীন নির্বাচন মেনে নেওয়া হবে না : নাহিদ একাত্তরের অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতেই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান- আসিফ মাহমুদ জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা ২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের দায়িত্বে সিমন্স
বাবাকে খুঁজছে কিবরিয়ার ছোট্ট শিশু

বাবাকে খুঁজছে কিবরিয়ার ছোট্ট শিশু

রিপোর্ট আজকের বরিশাল:
সহকর্মীদের কাছে তার পরিচিতি ছিল ‘কাজ পাগল মানুষ’। সেটাই তো হওয়ার কথা। সেই ছোট্ট বেলা থেকে ভালোবেসে যে পেশায় কাজ করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষ করে তাই হয়েছিলেন। ভালোই চলছিল, শত ব্যস্ততার পর যখন বাসায় ফিরে নিজের বছর দেড়েকের ছেলেকে কোলে তুলে নিতেন। সেই পাগলের মতোই তাকে আদর-ভালোবাসায় ভরে দিতেন। কিন্তু আজকের পর এসব শুধুই স্মৃতি। কাভার্ডভ্যানের চাপায় নিহত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার ছেলেটি কেবল আধো আধো বোলে দু’একটা কথা বলতে শিখেছে। কিন্তু কোনো দিন আর বাবা বলে ডাকা হবে না তার। বাবার আদর ভালো ভাবে অনুভব করার আগেই পিতৃহারা হতে হলো তাকে। সোমবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দায়িত্ব পালন করছিলেন, ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। ঠিক সেই সময় তাকে চাপা দেয় একটি কাভার্ডভ্যান। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে মারা যান তিনি। তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, কিবরিয়া কর্মরত ছিলেন বরিশাল মহানগর পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট হিসেবে। কর্তব্য পালনকালেও সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন তার ছোট্ট শিশুটির কাছে। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে ছিলেন তিনি। বাড়ি পটুয়াখালি জেলার মির্জাগঞ্জ থানায়। তার বাবা স্থানীয় সুবিদখালী কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছেন। কিবরিয়ার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিনি সবসময় চাইতেন বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি করতে। সেজন্য অন্যকোনো চাকরির পরীক্ষা না দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশে সার্জেন্টে হিসেবে যোগ দেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৭-২০০৮ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন গোলাম কিবরিয়া। বন্ধুমহলে পরিচিত ছিলেন মিকেল নামেই। লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিস্ট্রি এন্ড কালচার বিভাগে। স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ১৯ নম্বর রুমে থাকতেন তিনি। মিকেলের এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বন্ধু-সহকর্মী-স্বজনরা। সবার মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মিকেলের স্ত্রী মৌসুমি মৌ, তিনিও পুলিশের সার্জেন্ট। বরিশাল মহানগরেই কর্মরত রয়েছেন। একইসাথে বাংলাদেশ পুলিশে সার্জেন্ট হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তারা। মিকেলকে হারিয়ে স্বজন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা হাতড়ে ফিরছেন তার স্মৃতি। মিকেলের সহপাঠী বাংলাদেশ হাউসবিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কৌশিক আল মামুন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ভীষণ হাসিখুশি প্রাণ খোলা ছেলে ছিলো মিকেল। পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করতো। কখনো কারো সাথে দ্বন্দ্বে জড়াতে দেখিনি তাকে। সে পুলিশ হিসেবেও ভালো ছিলো। কখনো কাউকে হয়রানি বা নির্যাতন করেনি। যখনই কথা হতো তখনই বরিশালে যেতে বলতো। খুব অতিথিপরায়ণ ছিলো। মিকেলকে স্মরণ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার সহকর্মী এসআই আল আমিন চ্যানেল আই অনলাইন-কে বলেন: কিবরিয়া ভাই আর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে লেখাপড়া করেছি। এসএম হলেও পাশাপাশি রুমেই থাকতাম আমরা। ভাইয়ের চেয়ে দুই বছরের ছোট হলেও সবসময় ভাইয়ের সাথেই থাকতাম। খুব মনখোলা মানুষ ছিলেন তিনি। ‘‘বরিশাল গেলেই দেখা করা আড্ডা দেয়া হতো তার সাথে। মাস খানেক আগে একটা বিয়ের প্রোগামে ভাইয়ের সাথে আমার শেষ দেখা হয়। রিকশায় করে চলে যাবার সময় ভাই আমাকে বলেছিলেন ইনশাল্লাহ আবার দেখা হবে। কিন্তু আর কখনোই দেখা হবে না এটা মেনে নিতে পারছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে।’’সোমবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জিরো পয়েন্টে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছিলেন সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পটুয়াখালীগামী একটি বেপরোয়া গতির কাভার্ডভ্যানকে থামার সংকেত দেন তিনি। সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন কাভার্ডভ্যান চালক। এ সময় সার্জেন্ট কিবরিয়া মোটরসাইকেলে করে ধাওয়া করে কাভার্ডভ্যানের সামনে গিয়ে ফের থামার সংকেত দেন। কিন্তু চালক না থেমে সার্জেন্ট কিবরিয়াকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে সার্জেন্ট কিবরিয়া গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে রাজধানীতে নিয়ে এসে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2012
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD