সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০৩:০৪ অপরাহ্ন
ভান্ডারিয়া প্রতিনিধি:
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় তামিম খান নামে এক বখাটের প্রেমে সাড়া না দেওয়ায় রুকাইয়া আক্তার রূপা (১৫) নামে এক স্কুল ছাত্রীর ছবি ফটোশপে এডিট করে আপত্তিকর ছবি সামাজিক সাইটে ছড়িয়ে দিলে ক্ষোভে ওই স্কুল ছাত্রী বিষাক্ত ঔষধ খেয়ে আত্মহনন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বখাটে তামিম দশম শ্রেণীতে ওই স্কুল ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করে আসছিলো। শুক্রবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর রুকাইয়ার মৃত্যু ঘটে। আজ শনিবার সকালে নিহত স্কুল ছাত্রীর পরিবার লাশ এম্বুলেন্স যোগে ভান্ডারিয়া থানায় নিয়ে এসে অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ ওই স্কুল ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। নিহত স্কুল ছাত্রী রুকাইয়া রুপা (১৫) উপজেলার ভান্ডারিয়া বন্দর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে আসছিলো। সে পৌর শহরের হোটেল ব্যবসায়ী মো. রুহুল মুন্সির মেয়ে। রুপা চার ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। এঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিহত রুকাইয়ার স্কুলের বিক্ষুব্ধ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দোষী বখাটের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূল শাস্তির দাবিতে আজ শনিবার সকালে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিদ্যালয়ের সম্মূখ সড়কে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন, নিহত রুকাইয়ার সহপাঠি শিক্ষার্থী রূপকথা রানী, মেঘা আক্তার, তাহিয়া তাইফুন রিমি, ঐশি আক্তার, আমিনা আফরোজ প্রমূখ ।সমাবেশে নিহত রুকাইয়ার মৃত্যুর জন্য বখাটে তামিমকে দায়ি করে অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে কঠোর বিচার দাবি করা হয়। নিহতের বাবা রুহুল মুন্সীর অভিযোগ, উপজেলার নিজ ভান্ডারিয়া গ্রামের মঞ্জু খান এর বখাটে ছেলে তামিম খান (১৯)গত কয়েক মাস ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার পথে তার মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করে আসছিলো। বখাটের এ অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় বখাটে তামিম রুকাইয়ার একটি ছবি ফটোশপে অশ্লীলভাবে এডিট করে। সামাজিক সাইটে ও ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেয়। শুক্রবার বিকেলে এক সহপাঠীর সাথে প্রাইভেট পড়া শেষে বাসায় ফেরার পথে পুনরায় পথ আটকে তার সাথে প্রেম না করায় অশ্লীল এডিট করা ছবিটি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে তাকে হুমকি দেয়। এরপর বাড়িতে ফিরে রুকাইয়া বিষয়টি তার মাকে জানায়। তার মা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে তার বাবাকে অবহিত করেন। বিষয়টি জানা জানির পর রুকাইয়া ও তার পরিবার চরম বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েন। শুক্রবার রাতে রুকাইয়া তার কক্ষের দরোজা বন্ধ করে বিষাক্ত ঔষধ সেবন করে অচেতন হয়ে পড়েন । রাত ১০ টার দিকে মেয়ে রুপাকে তার কক্ষে তার বাবা ডাকতে গেলে দরোজা বন্ধ পান। অনেক ডাকাডাকির পরও মেয়ের কোনও সাড়া না পাওয়ায় কক্ষের দরোজা ভেঙে ফেলেন। এ সময় মেয়েটিকে ঘরের মধ্যে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। রুকাইয়ার আশপাশে ঘুমের ঔষধসহ বিভিন্ন ধরণের ঔষধ পাওয়া যায়। রাতেই পরিবারের স্বজনরা তাৎক্ষণিকভাবে মেয়েটিকে উদ্ধার করে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তার কোন চিকিৎসা না করেই তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে চিকিৎসক। পরে রাত আড়াইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই স্কুল ছাত্রী মারা যায়।এদিকে রুকাইয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্ত বখাটে তামিম খান ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘর ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করে।নিহত রুকাইয়ার বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার হাওলাদার বলেন, রুকাইয়া স্কুলের একজন মেধাবি শিক্ষার্থী । বখাটের অশ্লীল উৎপাতে তার এমন মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছিনা। মেয়েটি স্কুলের কেবিনেট নির্বাচনে প্রথম হয়েছিল। আমরা মর্মাহত শোকাহত। অভিযুক্ত বখাটের কঠোর দৃষ্টান্তমূলক দ্রুত শাস্তি চাই। আর যেন কোনও বখাটের উৎপাতে মেয়ে শিক্ষার্থীর জীবন বিপন্ন না হয়। এ বিষয়ে ভান্ডারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম মাকসুদুর রহমান বলেন, ওই স্কুল ছাত্রীর পরিবার থানায় লাশ নিয়ে এসে অভিযোগ দায়ের করলে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত বখাটে ঘটনার পর পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।