বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন
বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর (সাহেবেরহাট) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল হায়াদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরও একটি গুরুতর অভিযোগ প্রকাশ পেয়েছে। এবার জমি সংক্রান্ত একটি মামলা নিয়ে খোদ আদালতের দেওয়া আদেশ উপেক্ষা করে তিনি অবস্থান রাখলেন বিবাদীর পক্ষে। এমনকি সেই আদেশ বাস্তবায়ন প্রতিশ্রুতি দিয়েও ওসি মামলার বাদী সাহেবেরহাট কুন্দিয়ালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. হামেদ গাজীর (৬০) কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। যা নিয়ে পুলিশের ভেতরে শুরু হয়েছে তোলপাড়। একই থানার বকশি ফায়জুর রহমানের মধ্যস্ততায় ঘুষ গ্রহণের এ ঘটনাটিতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিব্রত।
যদিও এই ঘুষ কেলেংকারির ঘটনাটি বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শকের নির্দেশে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সহকারি কমিশনার (এসি) প্রকৌশলী শাহেদ আহম্মেদ চৌধুরী এই ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যগ্রহণও করেছেন বলে শোনা গেছে। এর আগেও বন্দর থানার ওসি মোস্তফা কামাল হায়দার ও বকশি ফায়জুরের বিরুদ্ধে রেণুপোনা পাচারে সহযোগিতাসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেই সময়ও মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে নামলে উভয়ের চেয়ার দুটি নড়বড়ে হয়ে যায়। কিন্তু বরিশালের সাংসদ মর্যাদায় এক আওয়ামী লীগ নেতা তাদের পক্ষে ভুমিকা রাখায় সেই দফায় রক্ষা পেয়েছিলেন। তবে এবারে এই ঘুষ গ্রহণের অভিযোগটি প্রমাণিত হলে তাদের ভবিষ্যত বিষিয়ে উঠতে পারে বলে আভাস দিয়েছে পাওয়া গেছে। কারণ পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান ঘটনাটি নিয়ে এমন মন্তব্য করে সিদ্ধান্তও জানিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশের একটি সূত্র। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়- বরিশাল সদর উপজেলার সাহেবেরহাট কুন্দিয়ালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. হামেদ গাজীর ২১ শতাংশ ভুমির দখল করার পায়তারা চালিয়ে আসছিলেন একই গ্রামের মো. শামীম খান লিখন। সাম্প্রতিকালে সেই জমিতে প্রতিপক্ষ জবরদস্তি স্থাপনা নির্মাণের তোড়জোড় শুরু করলে হামেদ গাজী আদালতে ১৪৪ ধারায় একটি অভিযোগ করেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক অভিযোগটি আমলে নিয়ে সেই ভুমিতে স্থাপনা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু বিষ্ময়কর ব্যাপর হচ্ছে এই আদেশটি বাস্তবায়নে কালক্ষেপন করে আসছিলেন বন্দর থানার ওসি মোস্তফা কামাল হায়দার। পরবর্তীতে তিনি বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্মত হলেও ২ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। এই টাকা দেওয়ার পরেও তিনি আদেশটি বাস্তবায়ন না করলে আরও এক লাখ টাকা দাবির প্রেক্ষিতে দেওয়া হয়। এই ঘুষ লেনদেনের মধ্যস্ততা করেন থানার বকশি ফায়জুর রহমান। কিন্তু এরপরেও ওসি বাদীর পক্ষে কোন ভুমিকা না রেখে উল্টো বিবাদী স্থাপনা উত্তোলনে সহযোগিতা করেন। এবং পরবর্তীতে সেই ভুমিতে ঘর তুলে ভাড়া দিয়ে ওসি ও বিবাদী নিচ্ছেন। বাদী হামেদ গাজীর অভিযোগ করেন- এই বিষয়টি নিয়ে ফের বাড়াবাড়ি করা হলে ওসি তাকে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলায় জড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন। এতে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দাবি করে বলেন- পুরো ঘটনাটি একটি অভিযোগ আকারে বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে তুলে ধরে প্রতিকার চেয়েছেন। তবে অভিযোগটি তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর থানার সহকারি কমিশনার (এসি) প্রকৌশলী শাহেদ আহম্মেদ চৌধুরী এই বিষয়ে কোন ধরনের মন্তব্য করতে নারাজ জানিয়ে বরিশালটাইমসকে বলেন- তদন্ত কার্যক্রম শেষের পথে। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন পুলিশের উচ্চমহলে তুলে ধরা হবে। কিন্তু তাদের তদন্তে কী উঠে এসেছে সেই বিষয়টি নিয়েও তিনি অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এদিকে ওসি মোস্তফা কামাল হায়দার ও বকশি ফায়জুর রহমান অভিযোগটি পুরোপুরি ভেগ দাবি করলেও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন বরিশালটাইমসকে বলছেন অভিযোগটি প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে। বরং উভয়ের বিরুদ্ধে শাস্তির আর্জি জানিয়ে হেডকোয়াটার্সে সুপারিশ রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে।’