শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৪ অপরাহ্ন
রিপোর্ট আমিনুল শাহীন :
মুলাদী উপজেলার ২নং নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদে দুর্নীতি লুটপাটে ব্যস্ত কর্তাবাবুরা। আর এ কারনে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে জনগন। এ অবস্থা দীর্ঘদিন যাবত চললেও বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব বিষয়ে একাধিক পত্রিকা ও অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ হলেও এ বিষয়ে এখনো সংস্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। সূত্রে জানা গেছে, নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু হাসনাত জাপানের বিরুদ্ধে এলজিএসপি-৩, টিআর ও কাবিখার বরাদ্দের টাকা এবং বিভিন্ন ভাতা গ্রহণকারীদের কাছ থেকে টাকা আদায়, গ্রাম পুলিশের বরাদ্দের টাকাও লুটপাট এর অভিযোগ তোলা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতসহ এলাকায় নানা অপকর্মের মূলহোতা এই চেয়ারম্যান বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে নাজিরপুরে এর উন্নয়ন কার্যক্রম। নাজিরপুর ইউনিয়নবাসীর অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদের এলজিএসপি বাস্তবায়নে কোন প্রকার দরপত্র আহ্বান না করেই কাগজে-কলমে ঠিক রেখে আরএফকিউ অনুসরণ করে ঠিকাদার নিয়োগ দেখানো হয়। গত ২০১৬ থেকে ২০১৯ প্রায় ৩ বছরে এলজিএসপি-৩ এর বরাদ্দকৃত অর্থে মানব কল্যাণ ও পিছিয়ে পড়া নারীদের ক্ষমতায়নে নামেমাত্র প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ঐ প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়নের চর নাজিরপুর বিদ্যালয় সংলগ্ন অভিভাবকদের উন্মুক্ত বৈঠকখানা নির্মাণের জন্য ১,৮৫,২৪৬ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। আজ পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়নি অভিভাবকদের জন্য বসার বৈঠকখানা। নির্মাণ না করেও বরাদ্দের অর্থ তুলে তা আত্মসাত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। একই অর্থ বছরের এলজিএসপি-৩ আওতায় নাজিরপুর ইউনিয়নের অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের সরঞ্জম ক্রয়ের জন্য ৪,৯৮,০০০ করা হয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে। বরাদ্দের সেই টাকা উত্তোলন করে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা কিনে প্রতিদিন ৫০০ টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিচ্ছেন চেয়ারম্যান জাপান। অতি দরিদ্র’র জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর শ্রমিকদের তালিকা অনুযায়ী যদি কোন শ্রমিক কাজে অনুপস্থিত থাকেন তাহলে তার মজুরির টাকা ব্যাংকে জমা থাকবে। কিন্তু তার ইউনিয়নে চলে উল্টো নিয়ম অনুপস্থিত শ্রমিকের টাকা কাগজে কলমে উপস্থিতি দেখিয়ে কৌশলে ব্যাংক থেকে তুলে নেন চেয়ারম্যান জাপান ও তার প্রতিনিধিরা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে পিজিবি বরাদ্দে উত্তর সাহেবেরচর আবদুল্লাহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ব্রিজ থেকে খেয়াঘাট পর্যন্ত ইটের সোলিং রাস্তা নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে ৪,৯৯,৮১২ টাকা বরাদ্দ হলেও রাস্তায় নিম্ন মানের ইট ও বালি ব্যবহার করার অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। বিগত বছরগুলোতে নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদে কোন উম্মুক্ত বাজেট ঘোষণা করা কিংবা সদস্যদের নিয়ে বাজেটের জন্য কোন সভা পর্যন্ত করে না চেয়ারম্যান জাপান। বাস্তবে কোন কার্যক্রম না করলেও কাগজে কলমে সব কার্যক্রম পরিপূর্ণভাবে করে থাকেন চতুর এই ইউপি চেয়ারম্যান। ইউডিসিসি স্থায়ী কমিটির সভা ও পরিকল্পনা সভাও করা হয়না বলে অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। পরিষদের অধিকাংশ কার্যক্রম ৪/৫ জন ইউপি সদস্য ছাড়া অন্যান্যদের অবহিত কিংবা মতামত নেয়া হয়না বলে অভিযোগ করেন একাধিক ইউপি সদস্যের। ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক হিসাবগুলোর বিষয় তদন্ত করলে সব বেড়িয়ে আসবে। নাজিরপুর ইউনিয়নের সকল খেয়াঘাটের ইজারা কাগজে কলমে মওকুফ দেখানো হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে ঘাট ভাড়া বাবদ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে টাকা। এতে করে সরকার প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাক রাজস্ব হারাচ্ছে। গ্রাম পুলিশের এক সদস্য অভিযোগ করেন, আমাদের জন্য গ্রাম আদালতের নোটিশজারীর পারিশ্রমিকসহ সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন বরাদ্দের অর্থ পর্যন্ত আত্মসাত করা হচ্ছে। এছাড়াও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা আসাদুল হক মিঠু এর বিরূদ্ধে রয়েছে মাদক ব্যবসার অভিযোগ। তাকেও সেল্টার দিচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান। এর আগেও সরকারি গাছ আত্মসাত করতে গেলে এলাকা বাসি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিকট খবর দিয়ে তুলে দেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আবু হাসনাত জাপান সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার সকল কাজে স্বচ্ছতা আছে, প্রয়োজনে আপনারা কাগজপত্র চেক করতে পারেন। বিভিন্ন ভাতা প্রদানে টাকা নেওয়ার বিষয় বলেন, আমি ভাতা গ্রহিতার কাছ থেকে অতিরিক্ত কোন টাকা নেই না, তবে যাদের সুপারিশে ভাতার কার্ড দেওয়া হয় তারা যদি টাকা নিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আমার কিছু করার থাকে না। অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য ব্যাটারি চালিত গাড়িটি কেন ভাড়ায় চালানো হচ্ছে? এমন প্রশ্নের চেয়ারম্যান বলেন, গাড়িটি ভাড়া দেওয়া হয়নি তবে সেটি ঠিক রাখার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের লোকজন নিয়মিত ব্যবহার করেন। কারণ এই গাড়িটি বসিয়ে রাখলে নষ্ট হয়ে যাবে বলে ইউপি চেয়াম্যান দাবী করেন। তাছাড়া যাত্রী ছাউনি, হেরিংবন রাস্তায় কোন দুর্নীতি হয়নি বলে দাবী তার।