বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
২৫% উৎসবভাতা এর পরিবর্তে ১০০% উৎসবভাতার দাবিতে শিক্ষকরা নগরীর মথুরানাথ পাবলিক স্কুল এর ৫৭তম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত। বরিশালে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন বরিশালের বিভাগীয় অপরাজিতা সম্মেলন অনুষ্ঠিত নগরীর আলেকান্দা কাজীপাড়া এলাকায় এক প্রবাসীর ক্রয় করা জমির গেট ভাংচুর করছে প্রতিপক্ষরা। বছরের প্রথমদিনে সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরন শান্তি প্রিয় যুবসমাজ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে , অসহায় মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরন। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি বরিশাল এর ২য় ব্যাচের ক্যাডেটদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী আমার কোন দল নেই -সালাউদ্দিন রিপন বরিশাল বিভাগে নূরানী ৩য় শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ
বরিশালে ভণ্ড গুরু সঞ্জিব চন্দ্র মাঝির কুর্কীতি

বরিশালে ভণ্ড গুরু সঞ্জিব চন্দ্র মাঝির কুর্কীতি

রিপোর্ট আজকের বরিশাল:
মানুষের সরল বিশ্বাস ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে নিজেকে অতিমানবীয় অলৌকিক ক্ষমতাধর সর্ব রোগের মহাসাধক দাবি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া বরিশালে এক ভন্ড গুরুর সন্ধান মিলেছে। অসংখ্য সাধারন মানুষ ভণ্ড গুরুর ধোঁকাবাজির শিকার হয়েছেন। অনেকেই লোক লজ্জার ভয় ও সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিশ্চুপ রয়েছেন। রোগীদের মধ্যে বিশেষ করে নারীদের সংখ্যাই বেশি। তিনি গুরু বাবা নামে রোগীদের কাছে পরিচিত। এ যেনো আরেক রাম রহিম সিংহ। এই ভন্ড গুরু বাবার নাম সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি। বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার উত্তর সােকাকাঠি গ্রামের অরুন চন্দ্র মাঝির পুত্র সে। তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে-অশোকানন্দ অবধূত গুরু মহারাজ নামক এক ব্যক্তি ২০০০ সালের ১৪ আগস্ট বরিশাল নগরীর কাশিপুর ইউনিয়নের রেন্ট্রিতলা,দাসেরবাড়ি নামকস্থানে অবধূত সেবাশ্রম মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে মন্দির প্রতিষ্ঠাতা অশোকানন্দ অবধূত ভোলায় অবস্থানকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাকে আশংকাজনক অবস্থায় বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত: ঘোষণা করেন। বছর চারেক আগে গুরু বাবা সেজে মানুষের সরল বিশ্বাস ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার টার্গেটে কাশিপুর অবধূত সেবাশ্রমে কৌশলীন্থায় আশ্রয় নেয় অরুন চন্দ্র মাঝি। এক্ষেত্রে ভন্ড গুরু অরুন চন্দ্র মাঝিকে অবধূত সেবাশ্রম মন্দিরের দেখভাল করার দায়িত্ব দেন মন্দিরের জমি দাতা লক্ষন দাস ও তার জমাই নিতাই। পরবর্তীতে অরুন চন্দ্র মাঝি নিজেকে সাধু বাবু সর্বরোগের মহাসাধক গুরু বাবা হিসেবে নিজেকে নানা কৌশলে জাহির করেন। এরসঙ্গে সংঘবদ্ধ এক দালাল চক্রও জড়িত রয়েছে। ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে প্রতারণার বিষয়ে ৯ সেপ্টেম্বর সোমবার সংবাদকর্মীরা অনুসন্ধানে ঘটনাস্থলে গেলে কয়েক দালাল নিজেদের রোগী হিসেবে পরিচয় দেন। দালালদের মধ্যে রয়েছে, বাকেরগঞ্জের গাড়ুরিয়া এলাকার শ্যামল চন্দ্র সমাদ্দার ও তার ছেলে মিঠুন চন্দ্র সমাদ্দার, ভাণ্ডারিয়ার তারাবুনিয়া এলাকার ক্ষিতিশ চন্দ্র কুরি। এছাড়া বেশ কয়েকজন নারী দালালও রয়েছে। আরেকদিকে মন্দিরের একপাশে নারী রোগীদের চিকিৎসার নামে শুয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫ জন রোগী ও ভন্ড সাধু বাবার ভক্তগন সেখানে আসছেন। অনুসন্ধানী সূত্রগুলো বলছে-বেশ কয়েক বছর ধরে ভন্ড গুরু সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি তিনি নিজেকে সর্বরোগের চিকিৎসার পসরা নিয়ে সাধু বাবা সেজে নানা ফু-ফাকর,তাবিজ,কবজ,তেলপড়াসহ নানাবিধ কৌশলী পন্থায় হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ভন্ড গুরু সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি চারিদিকে দালাল চক্র রেখে অব্যাহত প্রতারণা করে যাচ্ছে। এই ভন্ড সাধুর পাশে থাকা দালালরা প্রচার করে গুরু বাবার যে-কতো মাজেজা। এমন কোনো রোগ নেই যে তিনি ভালো করতে পারেননা। আবার কেউ কেউ ভয়ভীতিও প্রদর্শন করে যে,বাবার মাজেজার বিষয়ে অভক্তি করবে, তার আর নিস্তার নাই। তার বড়ই বিপদ। অভিজ্ঞমহলের ভাষ্য : আধুনিক যুগেও একের পর এক ভন্ড গুরু কিংবা ভন্ড ফকিরের আভির্ভাবে সর্বশান্ত হচ্ছে রোগী ও স্বজনরা। কিন্তু এ যেনো দেখার কেউ নেই। স্থানীয় সূত্র জানায়- গুরু সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি ভুত পেতœী নিপাত করে দেন। গ্রাম্য ভাষায় বলে আর্চরা। আর্চরা মানে কারো ওপর ভুত পেতœী ভর করা। এরমধ্যে আবার প্রকারভেদ রয়েছে-ভালো আর্চরা ও মন্দ আর্চরা। বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আর্চরা ছাড়াতে রোগীরা তার শরনাপন্ন হন। এছাড়া পেট ব্যথা,মানসিক রোগী,যাদের সন্তান হচ্ছে না সহ সকল ধরণের রোগীর সাধক হিসেবে কাজ করেন তিনি। শুধু বরিশাল অঞ্চল নয় এর বাইরে মাদারীপুর,ফরিদপুর গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষরা চিকিৎসা করাতে এখানে আসেন। দাম্পত্য জীবনে সন্তান হওয়ার কামনায় বাবার সঙ্গে মোটা অংকের লেনদেনে মৌখিক চুক্তি করা হয়। বাবার মাজেজায় সন্তানও ভুমিষ্ঠ হয়ে যায়। মানুষকে বান মারা,আবার বান শেষ করে দেয়া সবই বাবায় পারেন। বান মারা অর্থাৎ মাজেজায় নাকি মানুষকে মেরে ফেলা হয়। এমন কোন সমস্যা নেই যে-সাধু বাবায় সমাধান করতে পারেন না। এরকম প্রচারের জন্য একটি সিন্ডিকেট চক্র চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। প্রত্যহ বাবার আশ্রমের নারী-পুরুষ আসছেন। কেউ কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে ভণ্ড সাধু বাবার আশ্রমে মাসের পর মাস চিকিৎসার জন্য থাকছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বেশ কয়েকজন রোগী-দরবারে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে চিকিৎসা করাচ্ছেন। যারা মাসের পর মাস থেকে চিকিৎসায় আসেন তাদের সাথে বড় অংকের মৌখিক চুক্তি করেন। ২০ হাজার থেকে লাখের অধিক টাকাও এহেন চুক্তি করেন ভন্ড ভন্ড সাধক । সরেজমিনে দেখা গেছে, ভন্ড গুরু বাবা সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি আশ্রমের ২৪ ঘন্টাই পর্যায়ক্রমে দালাল চক্র সক্রিয় থাকছে। দালালদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচার করছে, বাবার যে কত মাজেজা আছে বলে শেষ করে যাবে না,ভাই আমি পুরো পাগল ছিলাম বাবার শরনাপন্ন হয়ে এখন পুরোপুরি সুস্থ। কেউ বলছে, আমার জন্মদাতা বাবাকে দেশের কোন মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো করতে পারেনি। কিন্তু বাবার কাছে নিয়ে আসার পর তার চিকিৎসায় আমার পিতা সুস্থ হয়ে গেছেন। কেউ বলছে, শুধু বরিশাল নয় দেশের বিভিন্নস্থান থেকে বাবার দরবারে চিকিৎসার জন্য দিবারাত্রি আসছে,সুস্থ হচ্ছে। কেউ বাবার বিরুদ্ধচারন করলে তার বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুক্ষিন হতে হয়। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। চক্রের সদস্যরা বলেন,বাবাকে চিনতে ভুল করেছেন,একেবারে শেষ হয়ে যাবেন। সূত্রের ভাষ্য-গুরু বাবা এভাবেই শ’শ নারী-পুরুষের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছেন। আশ্রমের মধ্যেই গুরু সঞ্জিব চন্দ্র মাঝির ভন্ডামী চলছে। যেখানে বসেই তিনি সর্বরোগের চিকিৎসার প্রতারণায় অর্থের ধান্ধায় মশগুল থাকেন। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রোগীদের সিরিয়াল পড়ে। প্রতারণার শিকার অসংখ্য নারী পুরুষ রয়েছেন। প্রতারণার শিকারদের মধ্যে রয়েছেন-ভোলার কুঞ্জের হাটের শফিক কেরানী,বাউফলের কেশবপুর এলাকার উত্তম চন্দ্র দাসের স্ত্রী সুমা রানী দাস, বাউফলের কালাইয়া ইউনিয়নের রাতুল মিস্ত্রি, কালাইয়ার কাজল রানীসহ নাম জানা অজানা অগনিত নারী পুরুষ। ভুক্তভোগী বাউফলের কেশবপুর এলাকার উত্তম চন্দ্র দাসের স্ত্রী সুমা রানী দাস বলেন- ৪ বছর আগে আমার স্ত্রী প্রচন্ড অসুস্থ ছিলো। স্ত্রীকে ক্লিনিকে ভর্তির হওয়ার আগে বরিশালের কাশিপুর অবধূত সেবাশ্রমে গিয়েছিলাম। স্ত্রীর সুস্থতা কামনায় তৎকালীন সময়ে স্ত্রীকে নিয়ে ধর্মগুরু সঞ্জিবের আর্শিবাদ নেই। আমার স্ত্রীকে বেলপাতা দিয়ে সুস্থতার জন্য আর্শিবাদ করেন। রাতে ওই আশ্রমে আমরা স্বামী স্ত্রী অবস্থানও করি। পরে আমার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হলে বরিশাল ইডেন ক্লিনিকে ভর্তি করি। সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসার পর আমার স্ত্রীর সন্তান প্রসব করে। একইসঙ্গে স্ত্রী ও সন্তান সুস্থ হয়। ধর্মগুরু সঞ্জিব কোন টাকা নিয়েছেন কিনা এরকম প্রশ্নের জবাবে বলেন-অনেক আগের ঘটনা টাকা দিয়েছি কিনা খেয়াল নেই,তবে আমার স্ত্রী বলতে পারবে। অশোকানন্দ ঠাকুরের ভক্ত ভোলার বাসিন্দা সৌরভ গাঙ্গলী বলেন,একসময়ে সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি ভোলায় অশোকানন্দ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত আশ্রমে থাকতেন। সেখান থেকে বরিশাল গিয়ে কাশিপুরের আশ্রমে নাকি ফকিরালী করে,এরকম আমরা শুনেছি। তিনি আরো বলেন-সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি আমাদের ধর্মগুরু নয়। আমি অশোকানন্দ ঠাকুরের ভক্ত। তিনি দেহত্যাগ করার পর ধর্মগুরুর দায়িত্ব পান তাপসনান্দ ঠাকুর। তিনি বিশেষ করে ভোলা আশ্রমে থাকেন। এছাড়া ভান্ডারিয়া ও বাকেরগঞ্জ আশ্রমের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অশোকানন্দ অবধূত ঠাকুরের ভাই ধর্মগুরু তাপসানন্দ ঠাকুর বলেন-আমার ভাই বরিশাল বিভাগে ৪টি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি দেহত্যাগের পর তাঁর প্রতিষ্ঠিত সবক’টি মন্দিরের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বভার আমার ওপর অর্পিত হয়। প্রতিষ্ঠিত চারটি মন্দিরের মধ্যে তিনটি যথা-ভোলা,বাকেরগঞ্জ ও ভান্ডারিয়া আশ্রম আমার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাকী বরিশালের কাশিপুরের ইউনিয়নের রেন্ট্রিতলা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত অবধূত সেবাশ্রম দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। সেখানে এক সংঘবদ্ধ কুচক্রিমহল ধর্মবহিভূত কর্মকাণ্ডে করে আসছে। ওই কুচক্রিমহলটি ধর্মকে পুঁজি করে আশ্রমকে ব্যবহারের মাধ্যমে একধরণের ব্যবসায়িকস্থানে পরিণত করেছে। যা জঘন্য অপরাধ। সেখানে যেসব কর্মকাণ্ড চলছে,তাতে আমি নিজেই মনক্ষুন্ন হয়ে আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে শীতল রয়েছি। মন্দিরকে ঘিরে এই চক্রের ব্যবসায়িক ধান্ধায় আশ্রমে সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি নামের এক ব্যক্তিকে ধর্মগুরু আখ্যা দিয়ে তার ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ডে আমি লজ্জিত ও বিব্রত। দালালদের প্রলোভনে পড়ে নানা ধরণের জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী এবং স্বজনরা,যারা গ্রামের সহজ সরল মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাসের আস্তায় কাশিপুর আশ্রমের ধর্মগুরু সাজা সঞ্জিব চন্দ্র মাঝির কাছে যায়। ধর্মের নামে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তাবিজ, কবজ, ফু, তেলপড়ার মাধ্যমে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে আশ্রমে আসা রোগীদের এহেন চিকিৎসা করানোর বিষয়টি এই আধুনিকযুগে চরম প্রতারণার সামিল। ধর্মীয় নিয়ম কানুন না মেনে প্রতারক চক্র ধর্মকে পুঁজি করে আশ্রমকে ব্যবসার স্থানে পরিণত করার বিষয়টি অমানবিক। এবং চক্রের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে আমাকে চরমভাবে ব্যথিত করেছে। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা অশোকানন্দ অবধূত ঠাকুরের ভাই ধর্মগুরু তাপসানন্দ ঠাকুর বলেন- কাশিপুরের রেন্ট্রিতলা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত অবধূত সেবাশ্রমে ধর্মীয় নিয়ম না মানার কারণে আপাতত আশ্রমের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রেখেছি। এই জমির দলিলও আমার সংরক্ষনে রয়েছে। ধর্মগুরু তাপসানন্দ ঠাকুর বলেন-কাশিপুর অবধূত সেবাশ্রমে যাকে ধর্মগুরু সাজানো হয়েছে,তার বাবার নাম অরুন চন্দ্র মাঝি। সেও ওজালী,ফকিরালী করতো। তার বাবা ফকির হিসেবে পরিচিত ছিলো। এবং সাজানো ধর্মগুরু সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা দলের সঙ্গে জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। ৯৬ থেকে ৯৮ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা দলের চিঠিপত্র একস্থান থেকে আরেক স্থানে পাঠানোর কাজে যুক্ত ছিলেন সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি। ক্ষোভ প্রকাশ করে ধর্মগুরু তাপসানন্দ ঠাকুর বলেন, পিতা-মাতা সন্তানকে কখন ত্যাজ্য করে,যখন সে কুসন্তানে পরিণত হয়। তদ্রুপ জগত সংসারে আমাদের চোখে সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি নামক ব্যক্তি সমাজের কুসন্তান। ধর্মগুরু তাপসানন্দ ঠাকুর এ প্রতিবেদককে প্রশ্ন রেখে বলেন-ঠাকুরের নাম ব্যবহার করে কেন এই অবমাননা করা হচ্ছে,কারা এসবের সঙ্গে যুক্ত? ধর্ম গুরু সাজা সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি সহ এই চক্রের অন্যান্যদের চিহৃিত করে আইনের আওতায় আনার দাবীও জানান ধর্মগুরু তাপসানন্দ ঠাকুর। এক্ষেত্রে তিনি প্রশাসনের আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন। ভন্ড গুরু সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি প্রসঙ্গে অবধূত সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি,বরিশাল বিমান বন্দর থানা কমিটির মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মুকুল মুখার্জী বলেন-আমি ওই লোককে চিনিনা। তবে তার নামে যেসব বিষয় শুনেছি,তা খুবই দু:খজনক। ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে ধর্মগুরু সেজে প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত কোন খারাপ লোককে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়াটাও অন্যায়। এ ধরণের খারাপ লোকদের বিতারিত করাটাই কাম্য। তিনি বলেন-কোনভাবেই এহেন ব্যক্তিরা সমাজে গ্রহনযোগ্য নয়। তিনি আরো বলেন-ধর্মীয়স্থানে ভালো লোক থাকবে,সেখানেতো কোন খারাপ লোকেরস্থান হতে পারে না। কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়তে এবং ধর্মীয়স্থানে যোগ্য ভালো মানুষদেরস্থান দিতে সামাজিকভাবে আমাদের সকলকেই সচেতনভাবে এসব বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে দেখা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন অবধূত সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মুকুল মুখার্জী। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’র বরিশাল জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক এ্যাড. হিরণ কুমার দাস মিঠু বলেন-এই আধুনিকযুগে এখনও যে কুসংস্কার রয়েছে,তারই ধারাবাহিকতায় কাশিপুরের অবধূত শেবাশ্রমে এই ব্যক্তিটি কুসংস্কারকে আশ্রয় প্রশ্রয় করে গ্রামের সহজ সরল নারী-পুরুষকে প্রতারণার মাধ্যমে যে চিকিৎসার ব্যবস্থাটি করে আমি তার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখে এই ভণ্ড গুরু ফকিরকে আইনগত ব্যবস্থায় আনার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির(সিপিবি)কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বরিশাল জেলা শাখার সাবেক সভাপতি এ্যাড. এ,কে আজাদ বলেন-মসজিদ,মন্দির বা আশ্রমে ফু-ফাকর,তাবিজ,কবজ,তেলপড়া এসব কোন চিকিৎসা না। আর চিকিৎসা পদ্ধতিও নয়। এগুলো সাধারন নিরীহ মানুষকে দালালদের মাধ্যমে প্রলোভনে ফেলে ওইসব ওজা,ফকিরদের শরনাপন্ন করে অর্থনৈতিক ফাঁয়দা লুটে স্রেফ প্রতারণা করে আসছে। এর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনের কঠোরভাবে নজর দেয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন সমাজ সচেতন রাজনীতিক আইনজীবী এ কে আজাদ। ৩০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন মোল্লা বলেন-অবধূত সেবাশ্রমে সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে গুরু বাবা সেজে সর্বরোগের চিকিৎসা করে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হতিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামাল মোল্লা। কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান কামাল হোসেন লিটন মোল্লা বলেন-ওই আশ্রমের ধর্মগুরুর প্রতারণার বিষয়টি আমার জানা নেই। আর আশ্রমের সভাপতি বিজয় বাবুর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে,তিনিই আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি বানোয়াট বলেছেন। এই আধুনিক সভ্য যুগেও কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মাসের পর মাস চিকিৎসার নামে নারী পুরুষ রোগী রেখে ফু-ফাকর,তাবিজ,কবজ,তেল পড়া দিয়ে চিকিৎসার বিষয়টি কতটা সভ্য,এরকম প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান লিটন মোল্লা বলেন-ভাই এই আধুনিক যুগে এখনও কেনই-বা তারা(রোগীরা) আধুনিক চিকিৎসা না নিয়ে আদিমযুগের ফু-ফাকর, তাবিজ, কবজ,তেলপড়ার মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছে। চেয়ারম্যান আরো বলেন-বিষয়টি হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী বিজয় বাবু ওই আশ্রমের সভাপতি,এজন্য তার সঙ্গে একটু কথা বলেন। এসব প্রসঙ্গে বরিশালের বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও দানবীর খ্যাত সমাজসেবক বিজয় কৃষ্ণ দে বলেন-অবধূত সেবাশ্রমের বিষয়টি আমি শুনেছি। সেখানে পক্ষ বিপক্ষ দুটি গ্রুপও রয়েছে। এই আধুনিক সভ্যযুগে মন্দির মসজিদে ফু-ফাকর,তাবিজ,কবজ,তেলপড়া দিয়ে চিকিৎসার বিষয়টি আপনি সমর্থন করেন কিনা ? আর অবধূত সেবাশ্রমের গুরু সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি আশ্রমে নারী রোগীদের রেখেও মাসের পর মাস ধরে মান্ধাতার আমলের ফু-ফাকর,তাবিজ,কবজ,তেল পড়া,বেলপাতা দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এসব প্রসঙ্গে বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী বিজয় কৃষ্ণ দে বলেন-প্রকৃতপক্ষে মানুষ এখনও যে কেন এহেন চিকিৎসার দিকে ঝুঁকছে,বিষয়টি আমার মাথায় কাজ করছে না। তিনি আরো বলেন-ওই আশ্রম নিয়ে একটু বিভাজন রয়েছে,এজন্য আমি এসবের সঙ্গে জড়াতে চাচ্ছি না। ১১ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা: মো: মনোয়ার হোসেন বলেন-রোগীদের চিকিৎসা করতে হলে যে চিকিৎসা করান,সেই ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট ডাক্তারী সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। সনদ ব্যতীত কেউ কোন রোগীর চিকিৎসা করতে পারেনা। ডাক্তারী সনদের বাইরে গিয়ে ফু-ফাকর,তাবিজ,তেল পড়ার মাধ্যমে যদি কেউ কোন নারী-পুরুষ রোগীর চিকিৎসা করেন, সেক্ষেত্রে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বলাবাহুল্য : অবধূত আশ্রমে কোন কমিটি নেই। অবশ্য দু’জন ব্যক্তি রয়েছেন,যারা নিজেদেরকে সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে জাহির করেন। সভাপতি দাবী করেন সুভাস দাস নামের এক ব্যক্তি। আর সম্পাদক দাবী করেন দুলাল নামের আরেক ব্যক্তি। দুলাল চন্দ্র দাস নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দাবী করে বলেন-অসহায় অবস্থায় সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি এখানে এসেছিলেন। এরপর ভক্তরা তাকে দেখভাল’র দায়িত্ব দেয়। সেই থেকে তিনি মন্দিরের ধর্মগুরুর দায়িত্ব পালন করছেন। রোগী দেখা প্রসঙ্গে বলেন- ধর্মগুরু সঞ্জিব চন্দ্র বেলপাতা দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করেন। এতে মানুষ উপকার পায়,এ কারণে নারী-পুরুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। তিনি আরো বলেন অবধূত আশ্রমের মূল সভাপতি বিজয় বাবু। আর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুভাস দাস এবং সম্পাদক আমি (দুলাল চন্দ্র দাস)। এ বিষয়ে সুভাস দাস বলেন- অবধূত আশ্রমের সভপতি বিজয় কৃষ্ণ দে। আর আমি সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছি। বরিশাল মেট্টোপলিটন পুলিশের বরিশাল বিমান বন্দর থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল বলেন-কাশিপুর রেন্ট্রিতলা এলাকায় অবধূত আশ্রমে ধর্মগুরু সেজে সঞ্জিব চন্দ্র মাঝির প্রতারণার বিষয়টি আমার জানা নেই। আর এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগও দেয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত কেউ অভিযোগ দিলে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়সহ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ধর্মগুরু সঞ্জিব চন্দ্র মাঝি বলেন-বাবা অশোকানন্দ অবধূত এর কাছে আমার বাবা আমাকে দান করে দেন। বাবা অশোকানন্দ অবধূত মারা যাওয়ার পরে আমাকে মন্দির,সমাধি ও ভক্ত এবং রোগীদের দেখার দীক্ষা দিয়ে যান। বাবার কথা অনুযায়ী আমি ভক্ত ও গুরু শিষ্যদের দিক্ষা দিয়ে আসছিলাম। পাশাপাশি রোগীদের দেখাশুনা করে আসছি। কিন্তু গত এক বছর ধরে আমি ভক্ত ও গুরু শিষ্যদের দীক্ষা দেই না। তবে রোগীদের দেখাশুনা করছি। তুলশী পাতা,বেল পাতা,জ্বল,শর্ষের তেল পড়া দিয়ে রোগীদের আমি সুস্থ করে তুলছি। সবমিলিয়ে ভন্ড গুরু সঞ্জিব চন্দ্র মাঝির প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কত নারী- পুরুষ যে নিস্ব হয়েছে, তার কোন ইয়াত্তা নেই। ইতিহাস ঐতিহ্যের এই বরিশালে এখনও ভন্ড গুরু বা ভন্ড ফকিরদের প্রতারণা চলছে, বিষয়টি নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু তাতে কি, তিনি কতো যে শ’শ ভক্তের কাছে ‘ভগবান’। ভগবানের সব অপরাধই লীলামাত্র। আর তাই আইনের চোখে যাই হোক, এসব অপরাধের বিচার হওয়া যাবে না। ছেড়ে দিতে হবে তাদের ধর্মগুরুকে। বিচার করা যাবে না!

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2012
Design By MrHostBD