বৃহস্পতিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন
বরিশালের বাকেরগঞ্জ জেলার বৃহত্তর যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণার্থীদের ইচ্ছে থাকলেও বিষয়ভিত্তিক ব্যবহারিক (প্রাকটিক্যাল) যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে পারছেন না। প্রশিক্ষণ কোর্সে থাকা বিষয়ের ব্যবহারিকের অনুষঙ্গ না থাকায় এমনটা হচ্ছে।সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাকেরগঞ্জ উপজেলা সদরে অবস্থিত বরিশালের সব থেকে বড় প্রায় ৫ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতাধীন যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। যেখানে তিনমাস মেয়াদী কোর্সসহ এক মাস মেয়াদী নির্ধারিত বেশ কিছু কোর্স চালু রয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে যাত্রা শুরু হওয়া কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। যাদের মধ্যে সফলতার গল্পও সৃষ্টি করেছেন অনেকে।বর্তমানে এ কেন্দ্রে ৩ মেয়াদী কোর্সে ৯৫ তম ব্যাচের প্রায় ৬০ যুবক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এরমধ্যে ৩ জন মেয়ে রয়েছেন। সংস্কারের অভাবে সর্বত্র ভাঙাচোরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৩ মাস মেয়াদী কোর্সের মধ্যে হাঁস-গবাদিপশু পালন ও প্রাথমিক চিকিৎসা এবং মাছ চাষ ও কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ হাতে-কলমে ও প্রাকটিক্যাল দেওয়া হবে।আবার ১ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণগুলোর মধ্যে চলতি বছরে গবাদিপশু পালন, গরু মোটাতাজাকরণ, মাছ চাষ, মুরগি পালন ব্যবস্থাপনা ও মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রশিক্ষণ হাতে-কলমে ও প্রাকটিক্যালি দেওয়া হবে।সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এ কেন্দ্রে প্রাকটিক্যালি মুরগি পালন ছাড়া আর কোনো বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না। আবার কর্তৃপক্ষ মাছ চাষের কথা বললেও কেন্দ্রের ভেতরে থাকা একটি পুকুর এখন শ্যাওলা ভরে গেছে। সেটি দেখতে মজা পুকুরই বলা চলে। অপরদিকে পুকুরপাড়ে মাছের পোনা উৎপাদনের হ্যাচারি শেডটিও দাঁড়িয়ে রয়েছে ভাঙাচোড়া অচল অবস্থায়। আর কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণের জন্য যে জমি দেওয়া। সেখানটা দেখলে ঝোপঝাড়ে ভরা ছোটখাটো বন মনে হবে। কেন্দ্রটির হাঁস-মুরগি পালনের শেডে মুরগি ছাড়া হাঁসের কোনো দৃশ্যই চোখে পড়েনি, তেমনি ভাঙাচোড়া গোয়ালঘরে চোখে পড়েনি কোনো গরু কিংবা ছাগলের। খুজে পাওয়া যায়নি প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ক্যাম্পও। কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে আসা সুখময় মধু বলেন, অনেক আশা নিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে ৩ মাস মেয়াদী কোর্সের ৯৫ তম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী হয়েছি। গত ১ আগস্টে এখানে এসেছি। বই-খাতার পাতায় সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও প্রাকটিক্যালি মুরগি ছাড়া আর কোনো কিছুরই প্রশিক্ষণ নিতে পারছি না। রাসেল হোসেন নামে আরেক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, পুকুরে মাছ চাষ হয় শুনেছি, কিন্তু শ্যাওলা থাকার কারণে সেটি এখন পরিত্যক্ত ডোবা বলা চলে। আমরা চাই প্রতিটি বিষয়ে, বিশেষ করে হাঁস-গবাদিপশু পালনের প্রশিক্ষণ প্রাকটিক্যালি নিতে। যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর মো. সিদ্দিক আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর কেন্দ্রটির মধ্যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। সিডরের প্রভাবে কেন্দ্রের প্রাচীর, গোয়ালঘর, একাডিমক ভবন, হোস্টেলগুলোতে প্রচুর ক্ষতি হয়। গরু চাইলেই কেনা সম্ভব। কিন্তু গোয়ালঘরের বেহাল দশা ও নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় কেনা সম্ভব হচ্ছে না। আর পুকুরে কয়েকমাস আগে ৪ হাজার টাকার মাছ ছেড়েছিলাম, পুকুরে কয়দিন পরপরই শ্যাওলায় ভরে যায়। হ্যাচারির শেডটিও সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেটি কাজে লাগাতে পারছিন না।
হাঁস না থাকার প্রশ্নের বিষয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক চিকিৎসার প্রাকটিক্যাল স্থানীয় একটি পশু হাসপাতালে প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে গিয়ে করানো হয়ে থাকে। আর কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়ে থাকে।মালি না থাকায় বর্তমানে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না বলে যোগ করেন ওই কেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর।যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শোয়েব ফারুক বলেন, প্রাকটিক্যালের জন্য গরুসহ যেসব জিনিস নেই। সে বিষয়ে জানতে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমি জেনে আপনাকে জানাবো। কিছুদিন পরে কষ্ট করে আমাকে আবার একটু নক করবেন।গবাদিপশু পালনের প্রশিক্ষণের ব্যবহারিক শেখার স্বার্থে প্রশিক্ষণার্থীরা বলছে, আমাদের স্বার্থেই যেহেতু গবাদিপশুর প্রয়োজন। তাই কর্তৃপক্ষ যদি এটি সরবরাহ করে, এর দেখভাল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশিক্ষণার্থীরাই নিশ্চিত করতে পারবে।