সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ট্রাম্পের শুভেচ্ছাবার্তা কিসের ইঙ্গিত? ভারত কি তবে ব্যর্থ! কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি বলেই বেগম জিয়া ‘একজন আপোষহীন নেত্রী’ — আবু নাসের মো: রহমাতুল্লাহ মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবু সাঈদের ‘ভাস্কর্য’ চায় না পরিবার সংস্কার ও বিচারবিহীন নির্বাচন মেনে নেওয়া হবে না : নাহিদ একাত্তরের অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতেই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান- আসিফ মাহমুদ জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা ২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের দায়িত্বে সিমন্স ব্রাজিলকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনা

রিফাত হত্যায় ১৬টি মামলা

আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় একটি রিকশাসহ ১৮ ধরনের আলামত জব্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এর মধ্যে একটি রিকশা ব্যতীত বাকি ১৭ ধরণের আলামত আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ। এছাড়াও এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৭৫ জনকে। এদের মধ্যে নিহত রিফাতের ঘনিষ্ঠ স্বজনসহ পুলিশ, চিকিৎসক এবং এলাকাবাসী রয়েছেন। মামলায় অভিযুক্ত ২৪ জনের মধ্যে আট অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মাদক, হামলা ও হত্যাচেষ্টা মামলাসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। রিফাত হত্যা মামলার চার্জশিট থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।এ মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. হামায়ুন কবির চার্জশিটে উল্লেখ করেন, মামলার এজহার ও তদন্তে যাওয়া অভিযুক্তদের বয়সের বিবেচনায় দুভাগে ভাগ করে চার্জশিটটি দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তদের নিয়ে গঠিত চার্জশিতে মোট অভিযুক্তের সংখ্যা ১০ জন আর অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তদের নিয়ে গঠিত চার্জশিটে মোট অভিযুক্তের সংখ্যা ১৪ জন।চার্জশিট থেকে জানা গেছে, রিফাত হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত ও তদন্তে পাওয়া অভিযুক্তদের মধ্যে আটজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে আগেও মোট ১৬টি মামলা ছিল। এসব মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মারধর, মাদক, হত্যাচেষ্টা ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে।আরও জানা গেছে, এ মামলার প্রাপ্তবয়ষ্ক অভিযুক্তদের নিয়ে গঠিত চার্জশিটে এক নম্বর অভিযুক্ত মো. রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে, মাদক, মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বরগুনা সদর থানায় মোট চারটি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় বিভিন্ন সময় তিনি গ্রেফতারও হয়েছেন। এ চার্জশিটের তিন নম্বর ও চার নম্বর অভিযুক্ত মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত এবং মো. রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়ের বিরুদ্ধেও মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বরগুনা সদর থানায় দুটি মামলা রয়েছে।প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তদের মধ্যে দুটি করে মামলা রয়েছে ছয় ও নয় নম্বর অভিযুক্ত মো. মুছা ও মো. সাগরের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে মুছার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দুটি মাদকের মামলা এবং সাগরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দুটির মধ্যে একটি নারী নির্যাতন ও অপরটি হত্যাচেষ্টা মামলা।এছাড়াও এ মামলার কিশোরদের নিয়ে গঠিত চার্জশিটের এক নম্বর অভিযুক্ত মো. রাশেদুল হাসান ওরফে রিশান ফরাজী ও মো. তানভীর হোসেনের বিরুদ্ধেও একটি করে হত্যাচেষ্টা ও মারধরের মামলা রয়েছে। এছাড়া মো. ওয়ালিউল্লাহ অলি নামে চার নম্বর কিশোর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একটি মাদক এবং একটি হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে।রিফাত হত্যা মামলার চার্জশিট থেকে জানা গেছে, তিনটি পেনড্রাইভ, একটি ডিভিডি, রিফাতের ওপর হামলার স্থানে রক্তমাখা রাস্তার পিচের অংশ বিশেষ, একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা, একটি রক্তমাখা অফহোয়াইট শার্ট, একটি স্টিলের চামচ, একটি কালো রংয়ের নারীদের জামা, একটি চিরুনি, মিন্নির বাঁধাই করা একটি ছবি, খোদাই করে নয়ন+মিন্নি লেখা একটি শামুক, সিম-মেমোরি কার্ডসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের ছয়টি মোবাইল ফোন, রক্তমাখা কালো রংয়ের একটি জিন্সের প্যান্ট ও একটি রামদা মামলার আলামত হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।এসবের মধ্যে তিনটি পেনড্রাইভ একটি ডিভিডিতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ বন্ড ০০৭ গ্রুপের সকল তথ্য ডাইনলোড করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্ক্রিনশটসহ নয়ন বন্ডের জন্মদিনে মিন্নির উপস্থিতির ভিডিও দেয়া হয়েছে একটি পেনড্রাইভে। এছাড়া এ মামলার আলামত হিসেবে দেখানো রিকশাটি মূলত আহত রিফাত শরীফকে নিয়ে কলেজের সামনে থেকে হাসপাতালে গিয়েছিল। শুধুমাত্র এই রিকশাটি মালিকের জিম্মায় প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বাকি সব আলামত আদালতে দেয়া হয়েছে।
পেনড্রাইভ ও ডিভিডিতে থাকা সকল ভিডিও ফুটেজ এবং স্ক্রিনশট পুলিশের পুলিশের সাইবার ফরেনসিক বিভাগের বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া হয়েছে। এসব ডিভাইসে থাকা ভিডিও ফুটেজ এবং স্ক্রিনশট কোনো প্রকার এডিটিং করা হয়নি, বিশেষজ্ঞদের দেয়া এমন সাইবার ফরেনসিক মতামত চার্জশিটে যুক্ত করা আছে। এছাড়া জব্দ করা ছয়টি মোবাইলের মধ্যে চারটি মোবাইলের বিষয়েও নেয়া হয়েছে বিশেষজ্ঞদের মতামত।আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় মোট ৭৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এদের মধ্যে নিহত রিফাতের বাবা-মাসহ নিকটাত্মীয় ও বন্ধুরাও রয়েছেন। রয়েছেন পুলিশ সদস্য, চিকিৎসক এবং প্রত্যক্ষদর্শীরাও। এদের মধ্যে ১২ জন পুলিশ সদস্য, চারজন চিকিৎসক এবং বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর নামও রয়েছে সাক্ষীদের তালিকায়। এছাড়াও নয়ন বন্ডের বাসার ভাড়াটিয়ারাও সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন।মামলায় এক নম্বর সাক্ষী করা হয়েছে নিহত রিফাতের বাবা মো. দুলাল শরীফকে। ২৬ নম্বর সাক্ষী করা হয়েছে হেলাল সিকদারকে। এই হেলালের মোবাইলকে কেন্দ্র করেই করেই রিফাত হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। ৩০ ও ৩৫ নম্বর সাক্ষী করা হয়েছে নয়ন বন্ড ও মিন্নির বিয়ের কাজী মো. আনিচুর রহমান এবং এবং বিয়েতে মিন্নির উকিল বাবা মো. রাইয়ানুল ইসলাম শাওনকে।এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবরী বলেন, রিফাত হত্যাকাণ্ড একটি আলোচিত ঘটনা। মামলাটি তদন্তের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে পুলিশ। সততা, নিরপেক্ষতা এবং সচেতনতার সঙ্গেই এ মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2012
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD