সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০২:৫১ অপরাহ্ন
নারী পুলিশ কনষ্টেবলকে বিয়ে করতে না পেরে কলেজ পড়ুয়া কিশোর বয়সী ছোট ভাইকে অপহরন করে নির্মম নির্যাতন করেছে বরিশাল নগরীর কাশিপুর এলাকার মশিউরের নেতৃত্বে এক দল সন্ত্রাসীরা। শরীরের সবখানে পিটিয়ে পিটিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে প্রতিশোধ নেওয়া হয়। এমনকি ব্লাকমেইলিং করার উদ্দেশ্যে হাতে ধারালো দা ও অস্ত্র দিয়ে নানান অপকর্মের স্বীকারোক্তিমূল কথার ষ্টিল ছবি ও ভিডিও করে রাখা হয়। ট্রিপল নাইনের ফোন পেয়ে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ ১২ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে গেল সোমবার (১৯-০৪-২০২১ইং) সদর উপজেলার রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের মিয়া বাড়ী এলাকা থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় নারী পুলিশ সদস্যের ভাই নাইম হোসেনকে (১৫)। সে সময় অবশ্য কোন অপহরনকারীকে ধরতে পারেনি থানা পুলিশ। নাইম হোসেনের দেয়া তথ্য ও আলামতের ভিত্তিতে অপহরনের সাথে কারা জড়িত, পুলিশ তা নিশ্চিত হলেও মামলা নিতে পারেনি। কারন,অপহরনকারীরা নাইমের মাকে বাহির থেকে বিভিন্ন জন এসে চাপ দিতে ছিলো,মামলা করলে খুন করা হবে ছেলেকে। তাই মামলা না করে ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে চলে যায় মা রেবু বেগম। ঘটনাটি যাতে মিডিয়ার কানে না পৌছায় সে জন্য নাইমের মা রেবু বেগম ও বাবা জাকির হোসেনকে বার বার হুমকির মুখে রাখা হয় । টু-টা শব্দ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি । পুরো বিষয়টি থানা পুলিশও আচ করতে না পারায় নিরাপদে থাকতে সক্ষম হয় অপহরনকারী সন্ত্রাসীরা। অপহরন হওয়া নাইম বরিশাল কশিপুর হাইস্কুল ও কলেজের একাদশ শ্রেনির ছাত্র। তার বাসা সিটি কর্পোরেশন ৩০ নং ওয়ার্ডের গনপাড়া এলাকায়। বড় বোন নুসরাত বর্তমানে ঢাকা এসপি অফিসে পুলিশ কনষ্টেবল পদে কর্মরত আছেন। একই কারনে এর আগেও ওই পুলিশ সদস্যের বাবা মা ও ভাইদের ওপর কয়েক দফা হামলা চালানো হয়েছিলো। পাশাপাশি নানান ঘটনা জুড়ে দিয়ে মিথ্যা মামলাও করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পুরো পরিবারটি। আর আহত শরীর নিয়ে নাইম ঘরের ভিতর নিরবে কাঁদছে। খুন হওয়ার ভয়ে ঘরের সামনে আসছে না। নাইম তার অপহরনের ঘটনা সম্পর্কে এ প্রতিবেদককে বলেন, পুলিশে চাকুরী করা তার বড় বোন নুসরাত পাশের বাড়ির সন্ত্রাসী মশিউরের সাথে বিয়ে বসেনি বলে বিভিন্ন সময়ে হামলা মামলা করছে। ঘটনার দিন আনুমানিক দুপুর দুইটার দিকে বাসার সামনে থেকে ১০/১২টি মটর সাইকেলে করে সন্ত্রাসী মশিউর’র নেতৃত্বে ফিরোজ,পান্না,ফোরকান,নিলকন,কাওসার মোজাম্মেলসহ প্রায় ২০/২৫জন সন্ত্রাসী মটর সাইকেলে করে অপহরন করে নিয়ে যায়। রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের শোলনা মিয়াবাড়ির এলাকায় নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে ৩০ নং ওয়ার্ডের চহটা এলাকায় ফেলে রেখে যায়। ভয়ার্ত ওই ঘটনার সময় হাতে দা ও অস্ত্র দিয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়। নাইমের মা রেবু আক্তার রুবি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তার ছেলে নাইম কে গেল সোমবার (১৯-০৪২০২১) দুপুর দুইটার দিকে বাসার সামনে থেকে স্থানীয় ঘটানাটি শুনে ঢাকায় পুলিশে চাকুরিরত মেয়ে নুসরাতকে ফোন করে জানায় মা রেবু বেগম। পুলিশ কনষ্টেবল নুসরাত তাৎক্ষনিকভাবে ট্রিপল নাইনে (৯৯৯) ফোন করলে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ উদ্বার অভিযানে নামে। ভিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে পশিচম চহঠা মিয়াবাড়ী এলাকা থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয় নাইমকে। রেবু বেগম আরো জানায়,শুধু ছেলেকে অপহরন করেনি,আমার স্বামির বিরুদ্ধে এরআগে মশিউরের চাচাতো ভাই নূরুল হকের বাসার ভাড়াটিয়া মায়ানমারের রোহিঙ্গা এক নারীকে দিয়ে মিথ্যা ধর্ষন মামলা দিয়েছে। ৩০ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারন সম্পদক বাবুকে সাথে নিয়ে দুই তিন বার বাসায় হামলা করেছে। তবে কেন এই অপহরন ও নির্যাতন? এমন প্রশ্নে মা রেবু বেগম জানান,তার মেয়ে নুসরাত যখন এস এসসিতে কাশিপুর স্কুলে পড়ালেখা করতো তখন সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত স্থানীয় মশিউর নামে এক মাদকসেবী উৎপাত করতো। বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতো। বখাটে ও মাদকসেবী হওয়ায় ওই ছেলেকে এড়িয়ে যেত তারা। পরে মেয়ে নুসরাতের পুলিশে চাকুরী হওয়ার পর সন্ত্রাসী মশিউর বেপরোয়া হয়ে উঠে দফায় দফায় হামলা মামলা করে ওই পুলিশ পরিবারের ওপর। পুলিশের চাকুরী ছেড়ে এসে বিয়ে না বসলে নির্যাতন হামলা মামলা চলতে থাকবে বলে এলাকায় জাননা দেয় সন্ত্রাসী মশিউর। এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নারী পুলিশ কনষ্টেবল নুসরাত টেলিফোনে এ প্রতিবেদককে জানান,তিনি ২০১২সালে স্কুলে এসএসসি পড়ার সময় বখাটে সন্ত্রাসী মশিউর তাকে নানা ভাবে হয়রানী করার চেষ্টা করেছিল। ভয়ে বাসা থেকে বের হতাম না। এর রেশ ধরে আমার বাবা মাকে একাদিকবার মারধর করেছে। রোহিঙ্গা নারীকে দিয়ে বাবার বিরুদ্ধে মিথ্য ধর্ষন মামলা সাজিয়ে জিম্মি করে নগদ ৫ লাখ টাকা অথবা ৫ শতাংশ জমি চাচ্ছে আমাদের কাছে। সর্বশেষ তার ছোট ভাই নাইমকে অপহরন করে বেধরক পিটিয়েছে। তার ভাইকে উদ্ধারের জন্য তিনি নিজে ট্রিপল নাইনে ফোন করেছিলেন বলে নিশ্চিত করেন । সান্ত্রাসী মশিউরের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য ইচ্ছা থাকলেও ছোট ভাইরা খুন হওয়ার ভয়ে তার মা রেবু বেগম থানায় মামলা করেননি বলে জানান নুসরাত । এখন থানায় মামলা ও স্থানীয় মেয়র এবং পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ’র কাগুজ পত্র রেডি করেছেন বলে জানান। অনুসন্ধানে জানা গেছে,মশিউর ক্ষমতাসীন দলের লোক পরিচয় দিয়ে আ’লীগের নেতাদের সাথে ছবি তুলে বনাম ভাঙ্গিয়ে শহর জুড়ে মাদক বিক্রি,জমি দখল ও সন্ত্রাসী করে বেড়ায়। এয়ারপোর্ট থানার সহকারি পুলিশ কমিশনার মাসুদ রানা জানান,অপহরন হওয়া নাইম সঠিক তথ্য দিতে পারেনি,তাই আসামি গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। যদি ভূক্তভোগি পরিবার সহযোগিতা চায়,আমরা আইনি সহায়তা দেব।