বৃহস্পতিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০২:১২ পূর্বাহ্ন

ই’তিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত

ই’তিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত

ই'তিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত
ই'তিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত

ই’ তিকাফের শাব্দিক অর্থ – কোন স্থানে অবস্থা করা। শরীয়াতের পরিভাষায় – যেই মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাত সহকারে নিয়মিত আদায় করা হয় এমন মসজিদে আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের উদ্দেশ্য নিয়ত সহকারে অবস্থান করাকে ই’ তিকাফ বলে। রাসুল সা নিজেই ই’ তিকাফ করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামদেরকে ই’ তিকাফ করার জন্য উৎসাহিত ও অনুপ্রানিত করেছেন।
রমজান মাসের শেষ ১০ দিন অর্থাৎ ২০ শে রমজান সূর্য ডোবার আগ মুহুর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ উঠা পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। গ্রাম বা মহল্লার পক্ষ থেকে কোনও একজন বা একাধিক ব্যক্তি এই ইতিকাফ করলে তা সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে।  অন্যথায় গ্রাম বা মহল্লার সকলে গুনাহগার হবেন। রাসুল সা এর চিরাচরিত অভ্যাস ছিল রমজানের সারা মাস ইতিকাফ করা। কিন্তু রাসুল সা এর ইনতিকালের বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ করেন। ইতিকাফের প্রধান উদ্দেশ্য হল লাইলাতুল কদর তালাশ করা। আল্লামা ইবনে কাইয়ুম (র) বলেন- ইতিকাফের উদ্দেশ্য হল – আল্লাহ তায়ালার পাক জাতের সাথে নিবিড় ভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা। ইতিকাফ অবস্থায় সালাত আদায়, জিকির,তাসবিহ, তাহলিল,তাকবীর ও ইস্তিগফার এবং নবী করীম স এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠে মশগুল থাকা মুস্তাহাব। নবী করীম স, সাহাবায়ে কেরাম ও যুগে যুগে বুযুর্গদীনরা ইতিকাফ করেছেন তাই আমাদের ও ইতিকাফ করা একান্ত কর্তব্য।  আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদে ইতিকাফের কথা গুরুত্ব সহকারে বর্ননা করেছেন -” স্মরন কর এস সময়ের কথা যখন আমি কাবা গৃহকে মানব জাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থান করেছিলাম এবং বলেছিলেন, তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর স্থানকে সালাতের স্থানরুপে গ্রহন কর এবং ইব্রাহীম ও ইসমাইলকে আমার গৃহ তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারীও রুকুকারীদের জন্য পবিত্র রাখতে আদেশ দিয়েছিলাম”।(সুরা বাকারা- ১২৫). অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- “আমি ইব্রাহীমের জন্য স্থির করে দিয়েছিলাম কাবা গৃহের স্থান,তখন বলেছিলেন – আমার সাথে আর কিছুকে শরীক সাব্যস্ত করবে না এবং আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে তাওয়াফকারী, রুকুকারী ও সিজদাকারীদের জন্যে”। ( সুরা হজ্জ- ২৬). প্রথমোক্ত আয়াত দ্বারা প্রমানিত হয় যে কাবা ঘর নির্মিত হয়েছিল তাওয়াফ, ইতিকাফ ও রুকু- সিজদা তথা সালাতের উদ্দেশ্যে।  দুটি আয়াত মিলিয়ে পাঠ করলে তাওয়াফ ও ইতিকাফ সমপর্যায়েরই দুটি কাজ বলে প্রতীয়মান হয়। সুতরাং শরীয়াতে ইতিকাফ যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার তাতে কোন সন্দেহ নেই। হযরত আয়েশা রা থেকে বর্নিত তিনি বলেন – “নবী করীম স রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে ওফাত দান করা পর্যন্ত এ নিয়ম পালিত হতে থাকে। তার ইনতিকালের পর তার সহধর্মিণীগণ ইতিকাফ করতেন”। ইবনে আব্বাস রা থেকে বর্নিত তিনি বলেন রাসুল সা ইতিকাফকারীদের সম্পর্কে বলেন – “ইতিকাফকারী গুনাহের আবিলতা থেকে মুক্ত থাকবে এবং তার জন্যে সে সমস্ত নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়ে যেমনটি সেসব পুন্য কাজ যারা করে তাদের জন্যে লিখিত থাকে”( মিশকাত ও ইবনে মাজাহ)। আল্লামা শারাবী তার কাশফুল গুম্বা কিতাবে নবী করীম স এর একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। যাতে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি রমজান মসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করেন সে ২ টি হজ্জ ও ২ টি ওমরা  করার সওয়ার লাভ করবে। (ফাজায়েলে রমাজান- পৃ.৫৫)  এ হাদিসে ১ম অংশ মানে ২ হজ্জ ও ২ ওমরার সওয়ার  সংক্রান্ত  অংশেই বায়হাকী হুযরত হুসাইন ইবনে আলী রা – এর প্রমুখাৎ বর্ণনা করেছেন।( আততাজ জামিউল উসুল, ২য় খন্ড, পৃ. ১০৫)  উল্লিখিত কুরআন মাজীদের আয়াত ও হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমানিত যে, ইতিকাফ মানব জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলত পূর্ণ। তাই রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা আমাদের  একান্ত প্রয়োজন।

লেখক- মাও. মুফতি আবুল হাসান সিদ্দিকী।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2012
Design By MrHostBD