সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনোও পরিকল্পনা নেই-প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। এক কর্মসূচি থেকে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চের ঘোষণাও দেয় শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শুক্রবার ঢাবির সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি পালন করবে বলে জানান মঞ্চের আহ্বায়ক শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ও অ্যাক্টিভিস্ট এ বি যুবায়ের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের দায়িত্ব ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। কিন্তু আমরা দেখছি, অনেকে বলতে চাচ্ছে, গুড আওয়ামী লীগ, ব্যাড আওয়ামী লীগ। কিন্তু যারা এমন একটি গণহত্যার পরও ক্ষমা চায়নি, এখন তাদের আবার গুড আওয়ামী লীগ কী?’
প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করে যুবায়ের বলেন, আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করছি, আমরা আপনার পাশে আছি, প্রয়োজনে আপনি গণভোটের আয়োজন করুন, জনগণ আপনার পাশে আছে। সমাবেশে মঞ্চের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এ বি যুবায়ের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের অপচেষ্টা রুখে দিতে ছাত্র-জনতা আবারও প্রস্তুত। রক্তের দাগ শুকায় নাই। এই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমার ভাইয়ের খুনিদের ফেরানোর কোনো চেষ্টা আমরা সফল হতে দেব না।
এ বি যুবায়ের বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এক হবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে আমরা একত্র হয়েছি। ‹গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ› আমরা তৈরি করেছি। আপনি যে দল, যে মত বা যে পথেরই হোন না কেন, যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে একমত হন, তাহলেই আপনি এখানে আমন্ত্রিত। আসুন, আবার এক হই, জুলাইয়ে যেমন হয়েছিলাম। গণহত্যাকারীদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, ইতোমধ্যে অনেক রাজনৈতিক দল পচে গিয়েছে, তারা ক্ষমতার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায় না। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের এই মঞ্চ বিলুপ্ত হবে। মঞ্চের পক্ষ থেকে আজ শনিবার বিকেল পাঁচটায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধকরণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও গণ ইফতারের আয়োজন করা হবে বলে সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে গতকাল শুক্রবার জুমার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত প্লাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ›। সংগঠনটির আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অতিক্রম করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
এসময় তারা- আওয়ামী লীগের বিচার চাই, আওয়ামী লীগের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে, একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর; ইউনূস সাহেবের বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে, গণহত্যার বিচার চাই, অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে, নিষিদ্ধ করতে হবে; আওয়ামী লীগের বিষদাঁত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও; শহীদেরা দিচ্ছে ডাক, আওয়ামী লীগ নিপাত যাকসহ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন ।
ইনকিলাব মঞ্চের মিছিলে, খুনি লীগের পুনর্বাসন, রুখে দাও জনগণ; জুলাইয়ের বাংলায়, গণহত্যাকারীদের ঠাঁই নাই, লেখা সম্বলিত প্লেকার্ডও দেখা যায়।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদী বলেন, আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে বাংলাদেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। দুই হাজারের অধিক শহীদ এবং হাজার হাজার আহতের রক্তের শপথ, আমাদের দেহে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেব না।
তিনি বলেন, এবার লীগকে সুযোগ দেওয়া হলে তারা অল্প কয়টা আসন নিয়ে বিরোধী দলে থেকে যাবে। আর তারা বিরোধী দলে থেকে কূটকচাল চালবে। তাদের কারণে বিএনপি ৩ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আওয়ামী লীগ-ভারত আর ইসরায়েলকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপিকে লাথি দিয়ে ক্ষমতা থেকে বের করে দেবে। তারপর দেশে আবার নারকীয় তা-ব চালাবে। আহতদের কচুকাটা করবে। তাই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে আমরা রাস্তা ছাড়বো না। একই দিন দুপুরে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে সাবেক ছাত্র সমন্বয়কদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‹বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ›।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতি ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদে দিনগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।